মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ধানের দামের ধস পড়েছে । কিছুদিন আগে ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল কেনার ঘোষণা দেয় সরকার। ফলে প্রতি মণে ১০০-২০০ টাকা বাড়ে ধানের দাম। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ধানের দাম আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আমন চাষিরা। বাজারে ধস নামায় ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা।
জেলার সদর উপজেলার ঘনিমহেশপুর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার আমন ধান কাটার শুরুতে যদি ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল কেনার ঘোষণা দিত, তবে কৃষকেরা লাভবান হতো। শেষ মুহূর্তে এমন ঘোষণা দেয়ায় লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে এ বছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৩৭ হাজার ১৪১ হেক্টর জমিতে। তবে আমন ধানের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা যাবে বলে খাদ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
চালকল মালিক তোফাজ্জল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, সরকার ঠাকুরগাঁও থেকে যে পরিমাণ চাল কিনবে তাতে ব্যবসায়ীরা মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৬০০ বস্তা বরাদ্দ পেতে পারে। এতে দুই দিন মিল চালালে ওই চাল পাওয়া যাবে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী এক দিনের ধান কিনে নিয়েছেন। ফলে বাজারে চাহিদা না থাকায় ধানের দাম কমেছে।
ধানের সঠিক দাম না পেয়ে অসন্তুষ্ট জেলার কৃষকরা। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ আমন ধান ছিল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এ বছর প্রথমে প্রতি মণ ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সরকারের ঘোষণার পর মণপ্রতি ১০০-২০০ টাকা বাড়লেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার এক একর জমিতে ধান হয়েছে ৪০-৪২ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৩২-৩৩ হাজার টাকা। কৃষকদের কাছে যখন ধান থাকে তখন সরকার কেনার ঘোষণা দিলে বাজারে ধানের চাহিদা থাকত এবং চাষিরা লাভবান হতো।
এ ব্যাপারে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু জানান, একটি মিলের বরাদ্দের বিপরীতে যে পরিমাণ ধান দরকার মিল মালিকরা ইতোমধ্যে তা সংগ্রহ করেছে। সে কারণে বাজারে এখন ক্রেতা না থাকায় চাষিরা ধানের দাম পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আফতাব হোসেনের পরামর্শ হচ্ছে, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর তা বিক্রি না করে কিছুদিন সংরক্ষণ করা গেলে এবং পরবর্তী সময়ে বিক্রি করলে কৃষকরা সহজে লাভবান হতে পারবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বছর জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু আমরা সব চাল সংগ্রহ করতে পারব না। সারা জেলায় চাল কেনা হবে ২২ হাজার মেট্রিক টন। কাজেই সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের ওপর জেলার ধানের দামে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখি না।’